Tuesday, September 2, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কারাত বনাম ইয়েচুরি

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কারাত বনাম ইয়েচুরি

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজকের বিষয়, কারাত বনাম ইয়েচুরি।

কেরালায় সিপিএম রাজ্য সম্মেলনের সময়ে আপাতত সিপিএমেরর শীর্ষ নেতা প্রকাশ কারাত জানালেন যে “আমাদের দল ইন্ডিয়া জোটের কোনও সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকার বিরোধিতা করেছিল কারণ বিভিন্ন নীতি, আদর্শ, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি সহ ২৬টি দলকে একক কেন্দ্রীয় কাঠামোতে রাখা সম্ভব নয়। তারা একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের চেষ্টা করেছিল, এবং আমরা বলেছিলাম যে এটি কাজ করবে না। শেষ পর্যন্ত, শুধুমাত্র নেতারা দেখা করতেন। কিছু কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিন্তু সেগুলোর কোনওটিই কাজ করেনি। মানে প্রকাশ কারাত সিপিএম-এর তরফ থেকে ইন্ডিয়া জোটের আনুষ্ঠানিক গঙ্গাযাত্রার ঘোষণাটা করে দিলেন। কিন্তু সেই যেদিন ইন্ডিয়া জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছিল, সেদিনে সিপিএম জেনারেল সেক্রেটারি মাত্র ক’দিন আগেই ২০২৪-এর নির্বাচনের ফলাফল আসার পরে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে কী লিখেছিলেন? তিনি লিখেছিলেন, ইন্ডিয়া ব্লকের সদস্যরা ভারতের জনগণকে আমাদের জোটকে প্রদত্ত অভূতপূর্ব সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছে। জনগণের রায় বিজেপি এবং তাদের ঘৃণা, দুর্নীতি এবং বঞ্চনার রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। এই রায় ভারতের সংবিধানের রক্ষার পক্ষে এবং মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং পুঁজিবাদী স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে। ইন্ডিয়া ব্লক বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী বিজেপি সরকারের শাসন থেকে মুক্তি পেতে আমরা যথাযথ সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। অর্থাৎ দলের সাধারণ সম্পাদক মারা যাওয়ার পরে বোঝা যাচ্ছে যে হয় ওই মত কেবল সীতারাম ইয়েচুরির ছিল, না হলে আপাতত যা হচ্ছে সবটাই প্রকাশ কারাতের ইচ্ছেতেই চলছে। না হলে মাত্র ক’মাস আগে যে দলের সাধারণ সম্পাদক বললেন যে, “ইন্ডিয়া ব্লক বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী বিজেপি সরকারের শাসন থেকে মুক্তি পেতে আমরা যথাযথ সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।” এখন বলা হচ্ছে রাত গয়ি, বাত গয়ি। নির্বাচন শেষ, ইন্ডিয়া জোটও শেষ।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | ঘরে কেউটে সাপ ঢুকছে, নজর রাখুন

আসুন এবারে বিষয়টাকে ভারতের রাজনীতির প্রেক্ষিতে দেখা যাক। ১৯২৫-এ তিনটে বিরাট ঘটনা ঘটেছিল। তার দুটো নিয়ে খানিক আলোচনা হয়। কানপুরে কমিউনিস্ট পার্টি তার পথচলা শুরু করেছিল। নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তাদের কাজ শুরু করেছিল আর ওই ১৯২৫-এই হিটলারের মেইন ক্যাম্ফ, মাই স্ট্রাগল বইটা প্রকাশিত হয়েছিল, জেলে বসে লেখা এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে ইহুদিদের জন্য ঘৃণা আর জার্মান নাগরিকদের এক নতুন দেশ গড়ে তোলার ক্লারিয়ন কল ছিল।

মজার কথা হল হিটলার তাঁর প্রায় পুরো পরিকল্পনা তাঁর বইতে লেখার পরেও সে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সমাজ গণতন্ত্রীরা বা কমিউনিস্টরা সমস্যার গভীরতা বুঝতে পারেননি। পূর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার, প্রথমে কমিউনিস্টদের মেরে, জেলে পুরে তারপর সমাজগণতন্ত্রী বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জেলে পাঠিয়ে আর শেষমেশ গণতন্ত্রীদের চুপ করিয়ে দিয়ে এক ফ্যাসিজমকে চাপিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির উপরে। মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, অন্তত নেওয়ার কথা কিন্তু আমাদের দেশের কমিউনিস্টদের সমস্যা বোঝার ন্যূনতম দক্ষতা আছে, এমন কথা চরম কমিউনিস্ট বিরোধীও বলবে না, প্রতিবার তাঁরা বাস্তব পরিস্থিতির ভুল বিশ্লেষণ করবেন এবং পরে, বহু পরে সেই ভুল স্বীকার করবেন। সীতারাম ইয়েচুরি নিজে বুঝেছিলেন, দলকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন সেই কথাটা যে কথা এক দশক আগে সৈফুদ্দিন চৌধুরি বলেছিলেন, সাফ বলেছিলেন যে বিজেপি এক বিরাট বিপদ, তার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সমস্ত বিজেপি বিরোধী শক্তিকে একসঙ্গে লড়তেই হবে। ১০ বছর পরে যাও বা ইয়েচুরি বুঝলেন, তিনি মারা যাওয়ার পরে কারাত সাহেব সেই চাকাকে আবার উল্টোদিকে ঘোরানোর কাজে মন দিয়েছেন। জানিয়েই দিলেন ওসব ইন্ডিয়া জোট ইত্যাদি শেষ, ওর কাজ ফুরিয়েছে। কেন? তিনি কি উন্মাদ? না, একেবারেই নয়, বরং উলটো, খুব টনটনে জ্ঞান, তিনি একটা কথাই মাথায় রেখেছেন, কেরালাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, ওই ইন্ডিয়া জোট ইত্যাদি কেরালাতে কোনও কাজে আসবে না। কাজেই সারা ভারতে এক দ্বীপের মতো কেরালাতে টিকে থাকা দলের মাথা হিসেবে তিনি কংগ্রেস এবং বিজেপি বিরোধিতাকে এক জায়গাতেই রেখে আবার রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে চান, দেশ, দুনিয়া নিয়ে আপাতত তাঁর কোনও মাথাব্যথাই নেই।

Read More

Latest News